23/02/2024
বাঙ্গালীর কষা মাংস
বাঙ্গালীর রান্না বান্নার কথা উঠলেই, যে সব খাবারের কথা উঠে আসে তার মধ্যে কষা মাংস অন্যতম। দু চার বছর আগেও প্রায় সব অনুষ্ঠান বাড়িতে গেলেই খুব বিরিয়ানী খাওয়ানোর রেওয়াজ লক্ষ করতাম। আজকাল আবার কোনো এক প্রকার রাইসের সাথে কষা মাংস মেনুতে বেশী দেখছি। মেনুতে লেখা থাকে কষা মাংস, কিন্ত প্লেট নিয়ে কাউন্টার এ পৌঁছে দেখা যায় সার্ভিসের ছেলেটি এক ট্রে ঘন ঝোলের মধ্যে হাতা নিয়ে সাঁতার দিয়ে মাংসের টুকরো খুঁজে বেরাচ্ছে। অনেক সময়ই দেখা যায় মাংস ভালো সেদ্ধ হয়নি এবং বেশ ছিবড়ে। ফলে পুরো খাওয়ার আগ্রহটাই নষ্ট হয়ে যায়।এর প্রধান কারণ, কম দামে কেনা অনুপযুক্ত মাংস। বাজারে বহু দোকান আছে যারা এই কম দামে নানা রকম মাংস বিক্রী করে অথবা বড়ো অর্ডারে মিলাবট করে। যিনি রান্নার দায়িত্বে থাকেন, হয় তিনি মাংস চেনেন না অথবা দামের সুবিধার জন্য আপোষ করেন। রান্নার বিষয়ে আমার মতে এই রান্নায় ঝোল থাকার কথা নয়। থাকবে ঘন হয়ে আসা থক-থকে মশলা, যার থেকে তেল টা ছাড়তে শুরু করেছে। ঐ ঝোলটাকেই ঠিক মাপে কষিয়ে জলটা টানিয়ে নিলেই উপযুক্ত চেহারা পাওয়া যেতে পারে। তেল কতটা থাকবে তার মাপটাও বিশেষ নজর দেওয়া দরকার। নাহলে এক গাদা তেল পেটে যাবে। যা নিশ্চয়ই স্বাস্থ্যকর নয়।
এই রান্না ভালো রেওয়াজী খাসি ছাড়া করলে কখনোই তার উপযুক্ত স্বাদ হয় না। তাই ভালো বিশ্বস্ত দোকান থেকে কেনাই সমিচীন। রান্নায় মশলার পরিমান, সময় ও আগুনের তেজ অন্য সব ভালো রান্নার মতই সঠিক হতে হবে। তবেই বিশেষ ভালো কষা মাংস পাওয়া যাবে। মশলা ও মাংস কষাই এই রান্নার মূল চাবিকাঠি। অনেক বাড়িতে কষা মাংস খেয়েছি, যেখানে রান্নার ওপ্র কয়েক আঙ্গুল তেল ভেসে থাকে। আমার দেখলেই কেমন চাপ বেড়ে যায়। আসলে, চর্বিযুক্ত মাংস থেকে রান্না করায় যে তেল বেরিয়ে আসে, হয়ত সেটা তারা আগে থেকে ঠিক অনুমান করতে পারেন না।
এক সপ্তাহ আগের রবিবার আমার স্ত্রীর স্কুলের বন্ধুরা আমাদের চিলেকোঠায়, মানে বাড়ির কভার করা ছাদে এক গেট টুগেদার করেছিলেন। অন্যান্য স্ন্যাক্স জাতীয় খাবারের পর মূল লাঞ্চের মেনু ছিল বাসন্তী পোলাও, কষা মাংস আর চাটনী। রান্নার দায়িত্ব ছিল আমার। আমি আমার স্বভাবসিদ্ধ প্রথাতেই রান্না করেছিলাম। ফল যেটা হয়েছিল, অতিথিরা সবাই আমার সাথে দেখা করে বলে গেলেন, এত ভালো কষা মাংস কখনো খাই নি। মাংস সুসিদ্ধ, কিন্তু কোনো পিস ভাঙ্গে নি। এক বন্ধুর মেয়ের বায়নায় তাকে খানিক্টা প্যাক করে পাঠানোও হয়েছিল। সে রন্ধনে বেশ পটিয়সী। সেই মেয়েটিও পরের দিন ফোন করে জানালো, রান্না নাকি দারুণ ছিল। খেটে খুটে কিছু করলে, প্রশংসা শুনতে কার না ভালো লাগে! বাসন্তী পোলাও-টিও উপযুক্ত সঙ্গত করেছিল।
যারা এসেছিলেন তারা অনেকেই আমার এখানে, মানে ফেসবুকে বন্ধু হিসেবে আছেন।