আমরা সবাই বেদান্তি

আমরা সবাই বেদান্তি Looking for a teaching job? Plz come here and choose. Please come here and choose.
শুধুমাত্র বিজ্ঞাপনদাতাই সকল দায়িত্ব বহন করবেন। আমরা শুধু চয়েস তুলে ধরব।

11/11/2023

আজ সেই নাস্তিক ঠোঁটকাটা ডাক্তারের
জন্মদিন যিনি রামকৃষ্ণদেবকেও ধমক
দিতেন! ‘তুমি পরমহংসগিরি করছ কেন?’

মহেন্দ্রলাল সরকারের এমন প্রশ্ন শুনে তাজ্জব রামকৃষ্ণদেবের শিষ্যরা। কিন্তু, কেউ কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না। এত বড়ো মাপের ডাক্তার। গিরিশচন্দ্র ঘোষ সহ বন্ধুস্থানীয় অনেকে অনুরোধ করেছেন বলেই তো রামকৃষ্ণদেবের চিকিৎসা করতে এসেছেন তিনি। এদিকে মহেন্দ্রলালের বিশ্বাস, এই ‘পরমহংস’ আসলে মথুরবাবুর শখের জিনিস ছাড়া আর কিছুই না। বড়োলোকদের এমন অনেক শখ থাকে। রামকৃষ্ণদেবের অবতারের তত্ত্বে একদমই বিশ্বাস করেন না ডাক্তার মহেন্দ্রলাল। অতএব, গিয়েই সোজা বসলেন রামকৃষ্ণের বিছানায়। তা দেখে ভক্তরা আরো ঘাবড়ে গেলেন। রামকৃষ্ণদেবের বিছানায় তো তিনি ছাড়া আর কেউ বসে না। ভক্তদের আপত্তিতে অবশ্য মহেন্দ্রলালের ভারি বয়েই গেছে। তাঁর কাজ ডাক্তারি। বিছানায় না বসলে রুগি দেখবেন কেমন করে!

মহেন্দ্রলাল সরকারকে যাঁরা চিনতেন, তাঁরা অবশ্য মোটেও খুব অবাক হননি এই আচরণে। এই কিংবদন্তী ডাক্তার মানুষটি খুবই দুর্মুখ। তার ওপরে নাস্তিক। তাঁর কথা যাকে বলে, ‘লাঠি মারা কথা’। নাহলে ভাবোন্মত্ত রামকৃষ্ণদেবের নাচগান দেখে তিনি ধমকে উঠে বলতে পারেন— ‘তুমি এরকম তিড়িংবিড়িং করবে না।’ রামকৃষ্ণদেবও কিন্তু ভয় পেতেন মানুষটিকে। রাখাল ডাক্তারকে নাকি বলেছিলেন— ‘মহেন্দ্র সরকার দেখেছিল, কিন্তু জিভ এমন জোরে চেপেছিল যে ভারি যন্ত্রণা হয়েছিল, যেন গরুর জিভ চেপে ধরেছে।’

অদ্ভুত মানুষ ছিলেন বটে মহেন্দ্রলাল সরকার। শৈশবেই বাবার মৃত্যুর পর কলকাতার নেবুতলায় মামাবাড়িতে মানুষ। ভর্তি হলেন হেয়ার সাহেবের ‘স্কুল বুক সোসাইটি’-তে (পরবর্তীতে হেয়ার স্কুল)। কিছুদিনের মধ্যেই ওলাওঠায় মৃত্যু হল হেয়ার সাহেবের, কলেরায় মারা গেলেন মহেন্দ্রলালের মা-ও। নিজেও অসুস্থ হয়ে স্কুল ছাড়তে বাধ্য হলেন মহেন্দ্রলাল। কিন্তু, উমাচরণ মিত্র আর টোয়েন্টিম্যান সাহেবের তত্ত্বাবধানে পড়াশোনা চালিয়েই গেলেন মেধাবী মহেন্দ্রলাল। কৈশোর থেকেই দেশে কুসংস্কারের বাড়াবাড়ি দেখে তিতিবিরক্ত মহেন্দ্রলাল ডাক্তারি পড়তে পড়তেই হয়ে উঠলেন ঘোর নাস্তিক। খানিকটা কঠিন, রুক্ষও। মেডিকেল কলেজে দ্বিতীয় বর্ষে পড়াকালীন একটা আশ্চর্য ঘটনা ঘটালেন মহেন্দ্রলাল। পঞ্চম বর্ষের ক্লাস নিচ্ছিলেন ডাক্তার আর্চার। তাঁর একটা প্রশ্নের উত্তর কেউ পারছে না, দরজার পাশ থেকে সেই প্রশ্ন শুনে উত্তর দিয়ে দিলেন মহেন্দ্রলাল। বিস্মিত আর্চার আবিষ্কার করলেন উঁচু ক্লাসের আরো বহু জিনিসই জানে মহেন্দ্রলাল। আগুনের মতো নাম ছড়িয়ে পড়ল তাঁর। একাধিক বৃত্তি, মেডেল নিয়ে ১৮৬৩-তে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় এমডি হিসেবে পাশ করলেন মহেন্দ্রলাল।

কুসংস্কার, পুজো-আচ্চা, কীর্তনে মেতে থাকা জাতির ভিতরে প্রকৃত বিজ্ঞানচেতনার উন্মেষ ঘটাতে আজীবন চেষ্টা করে গেছেন ডাক্তার সরকার। তাই লন্ডনের ‘রয়্যাল ইনস্টিটিউশন’ এবং ‘ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট অফ সায়েন্স’-এর মতো জাতীয় বিজ্ঞানসভা তৈরির প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি। যে প্রতিষ্ঠান চালাবে ভারতীয়রাই। তাঁর এই উদ্যোগের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন বিদ্যাসাগর, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, জাস্টিস দ্বারকানাথ মিত্র, কেশবচন্দ্র সেন, যতীন্দ্রমোহন ঠাকুর সহ আরো অনেকে। ‘বঙ্গদর্শন’-এর পাতায় (১৮৭৩, ভাদ্র) বঙ্কিমচন্দ্র এই প্রকল্পকে বাস্তবায়িত করার জন্য উদারহস্তে দান করতে অনুরোধ করলেন সবাইকে। ১৮৭৬-এ তৈরি হল বহু আকাঙ্ক্ষিত ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স’। সরলাদেবী চৌধুরাণীও এখানে আসতেন ফিজিক্স-বিষয়ক বক্তৃতা শুনতে। মহেন্দ্রলালের সংস্পর্শে এসে বিজ্ঞানচর্চায় আগ্রহী হয়েছিলেন গিরিশচন্দ্রও।

এহেন মহেন্দ্রলাল প্রথম চিকিৎসাজীবনে মনে করতেন, হোমিওপ্যাথি হল বুজরুকি। কিন্তু, ১৯০২-তে ‘ফিলজফি অফ হোমিওপ্যাথি’ নামের একটি বই পড়ার পর আমূল বদলে যায় তাঁর চিন্তা। শুরু করলেন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা। ‘ক্যালকাটা জার্নাল অফ মেডিশিন’ ততদিনে প্রকাশ করে ফেলেছেন মহেন্দ্রলাল। এবারে রাজেন্দ্রলাল দত্তের সাহয্যে শুরু করলেন হোমিওপ্যাথি ওষুধ তৈরি। যা বিশ্বাস করেন, যাকে সত্য বলে মনে করেন, তা লুকিয়ে রাখতে জানতেন না মহেন্দ্রলাল। তাই, মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের চতুর্থ বার্ষিক সভাতেও প্রকাশ্যে হোমিওপ্যাথির সমর্থনে বক্তব্য রাখলেন তিনি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেট তাঁর এই পরিবর্তন ভালো চোখে মেনে নিল না। মহেন্দ্রলালও ইস্তফা দিলেন পদ থেকে। ততদিনে, হানিম্যানের তত্ত্বে তিনি খুঁজে পেয়েছেন হিপোক্রিটাসের চিকিৎসানীতির সার। হানিম্যানের তত্ত্বের নানা ভুল তিনি ধরতে পারছেন, কিন্তু সেই চিকিৎসা-পদ্ধতির সত্য তাঁকে আকর্ষণ করছে। সেই আকর্ষণকেই আমৃত্যু জড়িয়ে ছিলেন একরোখা মানুষটি।

এমন মানুষ যে রামকৃষ্ণদেবকেও রেয়াৎ করবেন না, তাই স্বাভাবিক। রামকৃষ্ণদেব সম্পর্কে ভক্তদের নাকি বলতেন, ‘হি ইজ আ গুড ম্যান। তোমরা ওকে অবতার বলে খারাপ করে দিচ্ছ।’ আর এই পছন্দের মূলেও ছিল মহেন্দ্রলালের সেই সত্যের প্রতি চির আকর্ষণই। রামকৃষ্ণকে নাকি তিনি বলতেন, ‘তোমার সত্যানুরাগের জন্যই তোমায় এত ভাল লাগে।’ কিন্তু, ভক্তির আবেশ কখনো ঘিরে ধরেনি তাঁর চিকিৎসার বোধকে। একটা মজা গল্প মনে পড়ে এই বিষয়ে। একদিন ভাবাবেশে থাকা অবস্থায় রামকৃষ্ণদেব মহেন্দ্রলালকে জিজ্ঞেস করলেন—কেন এইসব হয়? উত্তরে ডাক্তার সরকার বললেন—নার্ভাস সেন্টারের অ্যাকশন বন্ধ হয়, তাই অসাড়—এদিকে পা টলে, যত এনার্জি, ব্রেনের দিকে যায়। এই নার্ভাস সিস্টেম নিয়েই লাইফ। ঘাড়ের কাছে আছে মেডুলা অবলংগাটা; তার হানি হলে লাইফ এক্সটিঙ্কট হতে পারে। এহেন ব্যাখ্যা শুনে সবাই তাজ্জব। মহেন্দ্রলাল এমনই। নাহলে কেউ বলতে পারে— ‘সাঁওতালদের হিস্ট্রি পড়ে জানা গিয়েছে যে, কালী একজন সাঁওতাল মাগী ছিল। খুব লড়াই করেছিল।’ রামকৃষ্ণদেবের সঙ্গে তীব্র মতবিরোধের পরেও তৈরি হয়েছিল এক গভীর সখ্য। রামকৃষ্ণ পরে ডাক্তারকে ভেঙিয়ে নাকি বলতেন— ‘আগে কেমন তিড়িংবিড়িং করত। এখন ডাক্তার ডাইলিউট হয়ে গিয়েছে।’

নিজের বিশ্বাস, যুক্তিবোধকে কিন্তু কখনোই ডাইলিউট হতে দেননি মহেন্দ্রলাল। মতাদর্শগত কারণে স্বেচ্ছায় ছেড়ে এসেছেন পদাধিকার, অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসক হিসেবে রমরমা খ্যাতি। আবার হোমিওপ্যাথি চর্চার সময়েও তিনি একেবারে নাকচ করেননি তাঁর পূর্বজীবনের চিকিৎসার জ্ঞান। ভুল-ঠিক যাই হোক নিজের বিচারে সত্যদর্শনকে আজীবন আঁকড়ে থেকেছেন মানুষটি। সবই ভালো, শুধু তাঁর মেজাজ বদলায়নি কোনোদিন। অবশ্য, মেজাজটাই যে আসল রাজা— তা ভালোই বুঝতেন মহেন্দ্রলাল।

জয় রামকৃষ্ণদেব

সূত্রঃ শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃত (অখণ্ড), ঠোঁটকাটা ভগবান, দেবদত্ত গুপ্ত

হিন্দুধর্মের একটি প্রধান সমস্যা হলো-দীক্ষা। খ্রীষ্টান, মুসলমানের মতো হিন্দুদের জন্মের পরেই দীক্ষার ব্যবস্থা নেই, যার ফলে...
11/11/2023

হিন্দুধর্মের একটি প্রধান সমস্যা হলো-দীক্ষা। খ্রীষ্টান, মুসলমানের মতো হিন্দুদের জন্মের পরেই দীক্ষার ব্যবস্থা নেই, যার ফলে হিন্দুরা জন্ম থেকে নামে হিন্দু, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে অনাথ। এর ফলে হিন্দুদের মধ্যে যুক্তিবাদ, উন্নত দার্শনিক চিন্তাভাবনা তথা মানবিকতার বিকাশ হয়েছে এও সত্য। তাদের খ্রীষ্টানদের মতো গির্জাঘরে প্রত্যেক রবিবারের ধর্মসভায় ধর্মান্তর করার পাঠ পড়তে হতে হয় নি, বা মুসলমানদের মতো মাদ্রাসাতে ব্রেইন ওয়াসডও হয় নি। ধর্ম হিন্দুদের কাছে স্বেচ্ছাধীন, ফলে তারা নিজের মতো করে ধর্মকে বুঝেছে, চিনেছে ও পালন করতে পেরেছে। কিন্তু এতে লাভের থেকে ক্ষতি হয়েছে বেশি। খ্রীষ্টান বা মুসলমানদের একটা ধর্মীয় লক্ষ্য আচ্ছে, যা তাদের জাতিকে এক করে রেখেছে। হিন্দুদের এই একতা দৃষ্টিগোচর হয় না। কারণ হিন্দুদের ধর্মীয় লক্ষ্য বলে কিছু নেই, সেটা ব্যক্তিবিশেষে পৃথক পৃথক।
দীক্ষার প্রয়োজনীয়তা হিন্দু ব্রাহ্মণ সন্তানের খুব একটা পড়ে না। কারণ, হিন্দু ব্রাহ্মণরা উপনয়নের মাধ্যমে গায়ত্রী মন্ত্র উপদিষ্ট হয়। ফলে, খ্রীষ্টান, মুসলমানদের মতো তারা একটা পালনীয় ধর্ম প্রাপ্ত হয়, যা অব্রাহ্মণ হিন্দুরা পায় না। “পালনীয় ধর্ম” কি?
এই যেমন খ্রীষ্টান সন্তান জন্মাবার পর বাপ্টিসমের মাধ্যমে খ্রীষ্টধর্মে উৎসর্গীত হয়, মুসলমানরা খতনার মাধ্যমে। অনেকটা আমাদের অন্নপ্রাশনের মতো। যদিও অন্নপ্রাশনের উদ্দেশ্য ভৌতিকঃ সন্তানের মঙ্গল, বৃদ্ধি ও সুরক্ষা, অহিন্দু পূর্বোক্ত সংস্কারগুলির উদ্দেশ্য কিন্তু আধ্যাত্মিক-পরমেশ্বরের সাথে যোগ স্থাপন করা। কিন্তু যেহেতু সেই যোগ অতিশৈশবে ব্যক্তিস্বাধীনতার পাওয়ার পূর্বে হয়েছে, তাই সে যোগ শিথিল। সেই যোগকে শক্ত করতে খ্রীষ্টানদের হয় হস্তার্পণ অনুষ্ঠান বা কনফার্মেশন। এই কনফার্মেশনের মাধ্যমে খ্রীষ্টান সন্তান খ্রীষ্টযাগ বা সাক্রামেন্ট গ্রহণের উপযুক্ত ও প্রাতিষ্ঠানিক খ্রীষ্টান ধর্মের মানুষ হয়ে হয়ে ওঠে। প্রতি রবিবার তার কমিউনিয়নে যোগ দিতে হয়, বিশেষ দিনে উপোস করতে হয়, ও কিছু ব্যক্তিগত সাধনা। মুসলমানদের এই প্রথা কলমা নামে পরিচিত। তবে, বর্তমানে ছেলে মেয়েরা একটু পড়ালেখা জানলেই তাদের কলমা পড়িয়ে মুসলমান করা হয়। শুধু খতনা মুসলিম হতে গেলে যথেষ্ট না।
হিন্দুদের এইসব নাই। তাদের জন্মানোর পর ষষ্ঠীপুজো, খুববেশি হলে নামকরণ ও তারপর অন্নপ্রাশন। এখন আবার অন্নপ্রাশন, নামকরণ একসাথে হয় খরচা বাঁচাতে। আগে বিদ্যারম্ভের একটা সংস্কার ছিলো, এখন সেটা সরস্বতী পুজোর দিন হয়। এছাড়া হিন্দু জাতকের আর কোনো সংস্কার নেই বিয়ের আগে অবধি। এর কোনোটিই আধ্যাত্মিক সংস্কার নয়, সবটাই জাগতিক বিভিন্ন প্রথা। সাধনা শুধু হিন্দু ব্রাহ্মণরাই পেয়েছে, অব্রাহ্মণ হিন্দুর সাধনার অধিকারটুকুও নেই। হিন্দু ব্রাহ্মণরা কিছু না হলেও নিত্য গায়ত্রী জপ করার মাধ্যমে শুদ্ধ, যা থেকে অব্রাহ্মণ হিন্দুরা বঞ্চিত। ফলে ভারতবর্ষের মতো বিশালকায় ধর্মপিপাসু দেশে ধর্মপালন থেকে বঞ্চিত বহু হিন্দু সন্তান। ফলে, আধ্যাত্মিক দীক্ষার গুরুত্ত্ব বেড়ে যায়। কিন্তু সেখানেও বহু সমস্যা আছে।
প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মীয় সংস্থাগুলি, যেমন শঙ্কর পরম্পরা, কিংবা রামানুজ, মধ্ব প্রমুখ, অব্রাহ্মণদের দীক্ষা দেন না। যদিও বা দেন তা সাধনপদবাচ্য না; অর্থাৎ সাধনা সংক্রান্ত উচ্চতর সংস্কার অব্রাহ্মণরা পায় না। ফলে, দীক্ষার জন্য বহু গুরুর উত্থান ও মঠমিশনের উত্থান ঘটে যারা আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছে, হিন্দু ধর্মের এই বিশাল ঘাটতিকে পূরণ করতে।
ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ, রামকৃষ্ণ মিশন, কৈবল্যধাম আশ্রম, সৎসঙ্গ, আর্যসমাজ আদি বহু ধর্মপ্রতিষ্ঠান এগিয়ে এসেছে উপদেশ দীক্ষার মাধ্যমে আপামর হিন্দুকে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে ধর্মের তথা অধ্যাত্মজগতের ছায়াতলে আনতে। যা অত্যন্ত সুলভ কিন্তু আবার একই সাথে নিন্দিত। কেন নিন্দিত? স্ট্যাটাসের কারণে নিন্দিত। এটা বুঝতে গেলে দীক্ষা নিয়ে একটু বুঝতে হবে, যে হিন্দুধর্মে দীক্ষাপ্রণালী আসলে কিরকম।
দীক্ষা বহুবিধ-উপদেশ দীক্ষা, কলাবতী দীক্ষা, ক্রিয়াবতী দীক্ষা, ক্রম দীক্ষা ইত্যাদি।
উপদেশদীক্ষা হলো সদ্গুরু কর্তৃক নাম বা বীজাক্ষর উপদেশ। সদ্গুরু শিষ্যের কানে নামমন্ত্র বা বীজমন্ত্র দিলে উপদেশ দীক্ষা হয়। উপদেশ দীক্ষার প্রাথমিক নিয়ম হলো জপ করা। জপ ছাড়া পুজো আচ্ছার অধিকার উপদেশ দীক্ষায় মেলে না। তবে, উপদেশ দীক্ষার গুরুত্ত্ব অপরিসীম। বলা হয়, অনিচ্ছা সত্ত্বেও কেউ মন্ত্রোপদেশ দিয়ে দিলে তা কার্যকরী হয় শিষ্যের জপ-সাধনার উপর। যেমন হরিদাস ঠাকুর মুক্ত ভাগবত সভায় হরিনাম শুনে নিত্য তিনলক্ষ্ জপ করতেন, আবার একলব্যও কিন্তু ঝোঁপের আড়ালে থেকে দ্রোণের শিক্ষা শুনে শুনে লুকিয়ে নিজে চর্চা করে সিদ্ধ হয়ে হয়েছিলেন। অতি ক্রুর ব্যাধ ভ্রুশুণ্ডি মুদ্গলের কাছে তারকব্রহ্ম গণেশ মহানাম লাভ করে স্বয়ং জীবদ্দশায় গণপতি সারূপ্য পেয়েছিলেন। যার জন্য বহু সাধক উচ্চকণ্ঠে মন্ত্রোচ্চারণ করে পূজা করেন না, এতে কেউ শুনে মন্ত্র চর্চা করলে দীক্ষার পূর্ণ ফল সে প্রাপ্ত হয়। বর্তমানে রামকৃষ্ণ মিশন, কি কৈবল্যধা্ম, কি ভারতসেবাশ্রম সঙ্ঘ সর্বত্র উপদেশ দীক্ষার চল আছে। তবে উপদেশ দীক্ষার শক্তিকে কাজে লাগিয়েই পরবর্তী বহু আচার্য্য সাধককে পূজার অধিকারও দিয়ে যান। যদিও তন্ত্রোক্ত কর্মে অধিকার প্রত্যক্ষ গুরুনির্দেশ ভিন্ন করা আজও নিষিদ্ধ সাধারণের জন্য।
কলাবতী দীক্ষা যোগদীক্ষা। ষটত্রিংশদ কলা হতে উৎপন্ন মাতৃকাক্ষর সম্ভূত বিবিধ মন্ত্রজালকে নিজের শরীর থেকে যোগবলে শিষ্য শরীরে সঞ্চারিত করে সর্বমন্ত্রের সারভূত কোনো মন্ত্র প্রদান করা হয়। বর্তমানে কোনো গুরুই এই দীক্ষা দানে সমর্থ নন। ঠাকুর রামকৃষ্ণ দেব এই দীক্ষা দিয়েছিলেন বলে জানা যায়।
ক্রিয়াবতী দীক্ষা জটিল। চক্র বিচার করে শিষ্যের সাধ্য মন্ত্র নির্বাচন করে সেই মন্ত্র যথোক্ত বিধানে পূজা-অভিষেকাদি দ্বারা প্রদান করা হয়। এই দীক্ষার বহু অঙ্গোপাঙ্গ দীক্ষা আছে। যেমন মন্ত্রাভিষেক বা শাক্তাভিষেক, পূর্ণাভিষেক, সাম্রাজ্যাভিষেক ইত্যাদি। উচ্চ উচ্চকোটির সাধক উচ্চ উচ্চতর দীক্ষা লাভ করে। গাণপত্যদের অষ্টবিধ, শাক্তদের দশ থেকে ষোলো প্রকার, শৈবদের পাঁচ প্রকার, বৈষ্ণবদের তিনপ্রকার এইরূপ ক্রিয়াদীক্ষার বর্ণনা পাওয়া যায়। এই দীক্ষা শিষ্যকে ব্রাহ্মণের থেকেও উচ্চতর মর্যাদা প্রদান করে থাকে তাই এই দীক্ষার নামে বর্তমানে বহু ভণ্ড গুরু বাজার খুলে বসে আছে যার ফলে দুর্লভ থেকে দুর্লভতর এই দীক্ষাগুলি মানুষ নিছক স্নান মনে করে গ্রহণ করে চলেছে।
এছাড়াও বাচিক দীক্ষায় গুরু শিষ্যের জিহ্বায় মন্ত্র লিখে দেন, লেখ্য দীক্ষায় গুরু শিষ্যকে মন্ত্রাদি লিখে প্রদান করেন ইত্যাদি বহুতর দীক্ষা শাস্ত্রে বর্ণিত।
তবে দীক্ষাদাতা গুরু পাওয়া জটিল কর্ম। খ্রীষ্টানরা স্থানীয় চার্চের যেকোনো অধিকারপ্রাপ্ত ব্যাপ্টিসমদাতা পাদ্রীকেই গুরু মনে করে শ্রদ্ধা করে থাকেন। মুসলমানদের যখন যিনি ঈমাম আসেন তখন তিনিই গুরু। ব্যক্তিগত গুরু যে নেই তা না, যারা ঐসব ধর্মে সাধন মার্গে হাঁটতে চায় তারা ব্যক্তিগত গুরু লাভ করে থাকে। তবে সেটি হিন্দুদের মতো জটিল কর্ম না। ব্যাবসাও এই ধর্মগুলিতে কম গুরুগিরির নামে। হিন্দুদের এই ক্ষেত্রে নাম খুবই খারাপ।
ব্যাপক পরিমাণ হিন্দু ধার্মিক মানুষ অদীক্ষিত। কেউ দারিদ্র দূর করতে সাধনা করতে চায়, কেউ দুঃখ, তো কেউ রো্গ, তো কেউ ভগবানকে পেতেই সাধনা করতে চায়। কিন্তু মনের মতো গুরু পাওয়া এই ক্ষেত্রে খুবই কষ্টকর। শিখ ধর্মে হয়তো এই জন্যেই গ্রন্থ সাহিবকে গুরু জ্ঞান করতে বলা হয়েছে, কারণ গুরু গোবিন্দ সিংজী জানতেন তাঁর পর যথার্থ সাধক কি গুরু শিখ ধর্মে আর কেউ আসবে না। তাই সব গুরুগিরির অবসান এক শাস্ত্রকেই গুরু বানিয়ে করে গেছেন।
কিন্তু হিন্দুদের সেকাজ সম্ভব না। হিন্দুদের শাস্ত্র তো কম না! আর দেবতাও কম না। আবার দেবতা ভিত্তিক শাস্ত্রও বহুতর। ফলে একীকরণ অসম্ভব।
এসবের জন্যই মঠমিশনের দীক্ষার গুরুত্ত্ব আরো বেড়ে যায়।কারণ এক্ষেত্রে একজন সদ্গুরুকে সামনে রেখে (যেমন কৈবল্যধামে শ্রীশ্রী রামঠাকুরকে, রামকৃষ্ণ মিশনে পরমহংস রামকৃষ্ণদেবকে, সৎসঙ্গে শ্রীঅনুকুলচন্দ্রকে, ভারতসেবাশ্রমে শ্রীপ্রণবানন্দ মহারাজকে ইত্যাদি), নামমন্ত্র বা বীজমন্ত্র উপদেশ করা হয়। এক্ষেত্রে গুরু বাছাই, কি যাচাই কোনোটাই করার ঝামেলা থাকে না কিন্তু সাধনার সম্পূর্ণ সহজ রাস্তা মানুষ পেয়ে যায়।
কিন্তু, মানুষের লোভ যে বড্ড বড়! সাধারণ উপদেশ দীক্ষায় নিজের মতো পুজো আচ্ছার অধিকার মানুষ পায়, শাস্ত্রের জোড়ালো বিধিবিধান পালন করতে লাগে না-অবৈধি ভক্তি। কিন্তু, এতে তান্ত্রিক পুজো আচ্ছার অধিকার মেলে না, যজমানির অধিকার মেলে না, নিজে গুরু হওয়ার অধিকার মেলে না; ফলে তান্ত্রিক ক্রিয়াবতী দীক্ষার প্রতি সাধারণ মানুষের ঝোঁক বেশি থাকে।
এখানে আবার সমস্যা হলো, লোভের বা অত্যাগ্রহের বশবর্তী হয়ে যারা দীক্ষা নিতে যায়, তারা নিজেদের ধার্মিক, ভক্ত, ও সদশিষ্য বলেই মনে করে গুরুকরণ করতে যায়। কিন্তু গুরু যদি সদ্গুরু হন, তবে তিনি সবার আগে এই অহংকারটাই শিষ্যের কাটান, নিজের দুর্ব্যবহার দিয়ে। আমি এমনও শুনেছি, উচ্চতর দীক্ষালোভে আসা শিষ্যদের কোনো এক পরম্পরার গুরু বলতেনঃ “এই বাড়ি থেকে এক বছর পায়খানা পরিষ্কার করবি, তবে গিয়ে দীক্ষা পাবি!”
যে সকল শিষ্য ফিরে গেছেন, তারা সেই গুরু নিন্দায় পঞ্চমুখ, “ওর শিষ্য নয় জমাদার চাই!”, “আমি কি বাড়ির চাকর নাকি যে এইসব নোঙরা ঘাটব!”…
আর যারা সেই জনৈক গুরুর বাড়ি থেকে একবছর পায়খানা কেন, বাড়ির চাকরের বৃত্তিই করেছেন, তারা সকলেই আজ সিদ্ধপুরুষ। সেই শিষ্যদেরই জনৈক আমাকে বলেছিলোঃ “গুরু ঘরের চাকর না হলে, মায়ের ঘরে চাকরি করব কেমনে? মা তো মূলাধারে, গুরু সহস্রারে!”
এহেন বিনম্রতা খুব কম শিষ্যের দেখেছি। অমুক গুরু মহাশাক্ত, মেধাসাম্রাজ্য দেবে, অমুক গুরু সব আম্নায় জানে, পূর্ণাভিষেক দেবে! আমার গুরু বলতেনঃ “হেগে ছুঁচোতে পারে না আর সুধাসাগরে ডুব দেবে, তারপর সেখানে মুতে দিলে কি মা পরিষ্কার করবে?”
সাধন জগৎ বড়ই দুর্বিষহ, অনেক পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।গুরুদত্ত মন্ত্র লাভ করে শিষ্যের অভি্যোগঃ “আমার সব ঐ গুরু ধ্বংস করেছে, এমন মন্ত্র দিলো আমার সব ছাড়কাড় হয়ে গেলো!”
আমি সেই শিষ্যের গুরুকে জিজ্ঞাসা করেছিলামঃ “কি দীক্ষা দিয়েছিলেন যে এই হলো?”
তিনি বলেছিলেনঃ “কালীই তো দিলুম।এখন শ্মশ্মানবাসিনীকে ডাকবে তো ঘর কি সোনায় ভরে যাবে? মুক্তি আর ভোগ কি একসাথে হয়? মা একটু পরীক্ষা করবে না?”
সাধনার প্রথম ধাপ এই পরীক্ষা, আগে গুরু করেনঃ অস্রাব্য ভাষায় অপমান, ইচ্ছার বিরূদ্ধ কাজ করতে দেওয়া, এমন মন্ত্রোপদেশ করা যা নিতে শিষ্যের মন চায় না। শিষ্য সব সইলে তবে গুরু উচ্চ দীক্ষা দেন। এবার উচ্চ দীক্ষা ঠিক হয়েছে কিভাবে বুঝব? একঝটকায় প্রথমে একের পর এক বিপদ, দুর্যোগ আসতে থাকবে। গুরু বলেনঃ “এ জীবনে ভোগ না করলে, পরের জীবনে ভোগ করতে আবার জন্মাবে। তাই এ জীবনেই সব হয়ে গেলে ভালো…”।
মেধাসাম্রাজ্য মানে যে কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়া তাতো নয়, নিজে জগদ্গুরুর আসনে বসাও নয়। এ হলো সংসারকে শ্মশ্মান করে শ্মশ্মানবাসিনীর সাধনা! যে বুকে সেই সৎসাহস নেই, সব হারিয়েও গুরুর পা ধরে থাকার ধৈর্য্য নেই, সেকি আদৌ উচ্চতর দীক্ষার অধিকারী?
এক গুরুর কাছে এক শিষ্য এলো দারিদ্র দূর করার মন্ত্র নিতে। গুরু বললেন, “প্রতি গুরুবার উপোস করে লক্ষ্মীপুজো করবা আর পাঁচালী পড়বা। মা সব কষ্ট দূর কইরা দিবো।”
সেই শিষ্যের পোশায় নি। সে কোন এক মহাশাক্ত গুরু থেকে কমলা মহাবিদ্যা নিলো, পরে শুনি সে এখন সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করে, বাড়িতে দারিদ্র সামান্য কমেছে কিন্তু উন্নতি কিছু হয় নি।সেই পূর্বের গুরু বলেছিলেনঃ “বেস্পতি বারের লক্ষ্মীব্রত যে করে না, তার ঘরে লক্ষ্মী টেকে না। রাজরাজেশ্বরীও কিসু দিতে পারবা না, যার মনে বারদেবতায় ভক্তি নাই…”।
আর সত্যিই তো। কত লোক শুধু মন্ত্র চাই মন্ত্র চাই করে। চণ্ডী পাঠ করব, চণ্ডীমঙ্গল পড়তে লজ্জা। মহাষোড়শী করব, কিন্তু লক্ষ্মীর পাঁচালীতে অশ্রদ্ধা। কালী পুজো করব, কিন্তু শীতলায় ভক্তি নেই, ছিন্নমস্তা চাই কিন্তু মনসা ছোটলোকের দেবী!
আমার গুরুদেবকে আমি গণেশ মন্ত্র চাই বললে আমাকে গনেশের অষ্টোত্তর শতনাম দিয়ে বলেছিলেনঃ নিত্য পাঠ করবে, এতেই যা হওয়ার হবে।
আমি করেওছি তাই একবছর, পরের বছর গুরুদেব সাঙ্গোপাঙ্গো মহাব্রহ্মণস্পতি অভিষেক দিয়েছিলেন। বলেছিলেনঃ “নাম পাঠে চিত্তশুদ্ধি হয়, এতে মন্ত্র ফল দেয় আগে।” আজও বিশেষ পর্বে সেই অষ্টোত্তর শতনাম পড়ি।
আমার এক গুরুভাই একই ভাবে শ্রীবিদ্যা চাইলে বলেছিলেনঃ “সকালে উঠে প্রতিদিন কাগজে একশো আটবার দুর্গা লিখবে। ওতেই হবে।”
সে তাই করেছে প্রায় তিন বছর। চতুর্থ বছরে সে উত্তরাম্নায় পঞ্চদশী ক্রম লাভ করে।সে আজও সকালে দুর্গা নাম ১০৮ লিখে যেকোনো কাজে বেড়োয়। সে নিজেই আমাকে বলেছেঃ “যেদিন লিখিনি সেদিন সারাদিন বাজে গেছে, যেদিন যেদিন লিখি, সেদিন কিছু না কিছু লাভ হয়।”
এই ক্ষুদ্রভক্তি, এই সামান্য বিশ্বাসগুলি, বড় বড় অভিষেককে হার মানায়। সাধারণ অদীক্ষিতদের জন্য অজস্র মঙ্গলকাব্য, পাঁচালী, ব্রত, নামগান আছে, সেইগুলিতে কারো ভক্তি দেখি না। পূর্ণাভিষেক না হলে আজ দীক্ষাই যেন বৃথা! অথচ পুর্ণাভিষেক পেয়ে আমার আজও লজ্জা হয় এই ভেবে যে বিষয়বাসনা আমার মনে আজও মারাত্বক! কি করলাম দীক্ষা নিয়ে?
সদ্গুরু শাসন করলে শিষ্যের গায়ে লাগে আজকাল। আগে শুনতাম গুরুরা বেত মারত শিষ্যদের, যদি সামান্য চরিত্রহানি হয়! আজ চরিত্রহীন শিষ্যরা গুরুদের চরিত্র বিচার করে! অমুক পরম্পরা, অমুক ক্রম, অমুক দর্শন…আজকাল আবার প্রত্যভিজ্ঞা, অদ্বৈতবাদ, ত্রিক দর্শন এসব নিয়েও খুব চর্চা হয়। যারা বেদান্ত বা ত্রিক সিদ্ধান্তে রিসার্চ করছে, তাদেরকেও ভুল বলে আজকালকার শিষ্য মণ্ডলী!
গুরু দু’পয়সা ধার চাইলে শিষ্য সুদ সমেত ফেরত নেয়! গুরুর দারিদ্র মেটাবার ক্ষমতা নেই, রাজরাজেশ্বরী মন্ত্র চাই!
শুনতে খারাপ লাগলেও একথা ধ্রুব সত্য, আমরা কেউ সাধক নই! উচ্চতর দীক্ষার কী, সামান্য মন্ত্র জপের অধিকার টুকুও আমাদের নেই-মন এতো ময়লায় ভর্তি! গুরুকে শিষ্য সাজেস্ট করতে পারে না কি মন্ত্র চাই-আমি গাণপত্য চাই, আমি শাক্ত চাই, আমি শৈব চাই…গুরু শিষ্যকে যা দেবে তাই নিতে হবে মাথা পেতে! যে তা নিতে পারে সেই শিষ্য, আর তা না হলে জটিল তান্ত্রিক দীক্ষায় না গিয়ে সাধারণ মঠমিশন থেকে নামদীক্ষা নিলেই সবচেয়ে ভালো। আমি আজ অবধি মঠমিশনের আশ্রিতদের দৈন্যতা দেখিনি, দেখেছি বড় বড় তন্ত্রমার্গীদের সর্বস্বান্ত হতে!
এই জন্যে প্রভু যীশুর কথাটি আমার সবচেয়ে প্রিয়ঃ “প্রার্থনা করো, যেন প্রলোভনে না পড়ো! আত্মা ইচ্ছুক (মুক্তির জন্য) বটে, কিন্তু রক্তমাংসের এই শরীর বড়ো দুর্বল!”

11/11/2023

এখনই নামজপ সুরু কর
=================

"কাজ কমিবে, অবসর হইবে, তারপরে দয়াল ঠাকুরের নাম লইবে, এই বুদ্ধি ছাড়িয়া দিও। যতক্ষণ ধড়ে প্রাণ আছে, ততক্ষণ মানুষের আর কাজ কমে না। কাজ যতই কমাইতে, গুছাইতে, শৃঙ্খলিত করিতে যাও না কেন, দুদিন পরে পরেই অপ্রত্যাশিত এক এক অবস্থা আসিয়া নূতন নূতন সঙ্কট, জটিলতা ও গূঢ়গ্রন্থি রচনা করিবে। সুতরাং নামের সেবারূপ সর্ব্বাপেক্ষা জরুরী কাজটুকুকে ভবিতব্যের উপরে ভারার্পিত না করিয়া এখনি সুরু কর। কোন্ নিশ্বাসটির পরে আর হয়ত নিঃশ্বাস ছাড়িবে না, কোন্ হৃৎস্পন্দনটির পরে আর হয়ত হৃৎস্পন্দন ঘটিবে না, চক্ষুটী কোন্ বার নিমীলিত করিবার পরে পুনরায় তাহা উন্মীলনের সম্ভাবনা থাকিবে না, তাহা কি জান? সুতরাং এখনি, অবিলম্বে, বিনা ওজরে, বিনা আলস্যে সকল কার্য্যের, সকল দায়িত্বের, সকল কর্ত্তব্যের মধ্যখানে নামজপ সুরু কর। "

অখণ্ড সংহিতা
ত্রয়োদশ খণ্ড
শ্রী শ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেব

◆ ১৯২ বছর আগের এক ভাইফোঁটা...   কালীপুজো-দীপাবলির রেশ মেটার আগেই চলে আসে ভাইফোঁটা। ১৮৩১ সালের ভাইফোঁটার দিনটা ছিল ৬ ই নভ...
11/11/2023

◆ ১৯২ বছর আগের এক ভাইফোঁটা...

কালীপুজো-দীপাবলির রেশ মেটার আগেই চলে আসে ভাইফোঁটা। ১৮৩১ সালের ভাইফোঁটার দিনটা ছিল ৬ ই নভেম্বর। অধুনা উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বাদুড়িয়ার পুঁড়োর বাজারে ৫০০ জেহাদী নিয়ে তিতুমীরের প্রধান সেনাপতি গোলাম মাসুম এলাকার সম্ভ্রান্ত বাসিন্দা মহেশ চন্দ্র ঘোষের একটা গরু ছিনিয়ে নিয়ে মন্দিরের সামনে কেটে বিগ্রহে গো-রক্ত মাখায়। গরুটিকে চার টুকরো করে পুঁড়োর বাজারের চার কোণে টাঙ্গিয়ে দেয়।

দীপাবলি-ভাইফোঁটায় মেতে থাকা বাঙালির এই ধরণের আক্রমণের অভিজ্ঞতা সেই অঞ্চলে আগে ছিল না। কিন্তু আরও অভিজ্ঞতা সঞ্চয় বাকি ছিল। আরবে শিক্ষাপ্রাপ্ত তিতুমীর বাঙালির সংস্কৃতিকে শেষ করতে ছিল বদ্ধপরিকর।

পরের দিন ইচ্ছামতীর অপর পারে পৌঁছায় জেহাদীরা। দুটি ষাঁড় মেরে ভোজ হয়। তারপর তাদের আক্রমণে লাউঘাট্টি বাজারে নিহত হন জমিদার তনয় দেবনাথ রায়। ফকির মিস্কিন শাহ এই জয়কে আল্লাহর জয় বলে ঘোষণা করে। তিতুমীর ঘোষণা করে, সে দার-উল-ইসলামের ঈমাম, তাকেই খাজনা দিতে হবে। জোর করে তোলা আদায় শুরু হয়।

◆ তিতুমীর :: জেহাদী থেকে মহাপুরুষ
-------------
বাংলায় বাম-জেহাদীদের পছন্দমত মহাপুরুষের আকাল পড়েছে বহুদিন ধরেই। তারা তাদের বশংবদ ঐতিহাসিক-বুদ্ধিজীবীদের বুদ্ধি-পরামর্শে আদ্যপান্ত জেহাদী তিতুমিঞাকে স্বাধীনতা সংগ্রামী বানিয়ে বাচ্চাদের মগজে পাকাপোক্তভাবেই তা ঢুকিয়ে দিয়েছে। তিতুমীরকে মহাপুরুষ বানাবার তোড়জোড়ও চলছে।

রাজ্যের সরকার পোষিত গ্রন্থাগারগুলিকে ১০০০.০০ টাকা করে অনুদান দেওয়া হয় প্রতি বছর ২৭ শে জানুয়ারী তিতুমীরের জন্মদিন পালনের জন্য।

তিতুমীর ইংরেজ তাড়াতে বাঁশের কেল্লা বানিয়ে লড়তে যায়নি। যেটা করতে চেয়েছিল, সেটা হল ওয়াহাবি আন্দোলনের আদর্শে, ইংরেজ ও হিন্দু জমিদারদের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে, এই নাপাক (অপবিত্র) বাংলার দার-উল-হারবকে সহি পাকস্থান (পবিত্র স্থান) দার-উল-ইসলামে পরিণত করতে।

এই জেহাদেই তার মৃত্যু। সুতরাং তাকে তো 'শহীদ' বলতেই হবে!

আর তাই তার স্মৃতিতে 'বাঁশের কেল্লা' নামে প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে জামাত গোষ্ঠীর একটি পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশিত হয়, যার পাঠক সংখ্যাও যথেষ্ট ঈর্ষণীয়।

◆ কে এই তিতুমীর?
------------
সম্রাট আকবরের মৃত্যুর পর সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে শায়খ আহম্মদ শিরহিন্দি নামের এক ইসলামি কট্টরপন্থীর উদ্ভাস ঘটে, যিনি নিজেকে ‘মুজাদ্দিদে আলফে সানি’ বলে দাবি করেছিলেন। ভারতে আগত ইসলাম বহু ক্ষেত্রে হিন্দু ধর্মের সঙ্গে মিশে তার আদি রূপ ধরে রাখতে পারেনি। বহু হিন্দুয়ানি সংস্কৃতিকেও গ্রহণ করে নিতে হয়েছিল ইসলামকে। ফলে মরু-আরবের ইসলাম ও গঙ্গা-ভারতের ইসলামের মধ্যে একটা বড় ধরণের ফারাক তৈরি হয়। প্রচণ্ড হিন্দু বিদ্বেষী শায়খ আহম্মদ শিরহিন্দি ভারতের এই ইসলামকে ইসলাম বলে স্বীকার করতেন না।

তার মৃত্যুর পর, মোঘল সাম্রাজ্যের পতনকালে উদ্ভাস ঘটল আরেক কট্টরপন্থীর, তার নাম শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভি। হিন্দুদের দমন করে দেহলভি ভারতকে পরিণত করতে চাইলো ‘দারুল ইসলামে', কিন্তু তার আশা পূরণ হলো না। তার মৃত্যুর পর এই দায়িত্ব গ্রহণ করলো সায়িদ আহমদ নামের আরেক কট্টরপন্থী। জেহাদি সংগঠন গঠন করে হিন্দু ধর্মের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে বিশ্বজুড়ে আল্লার রাজত্ব কায়েম করার তত্ত্বে পরম বিশ্বাসী ছিলেন এই ইসলামি পণ্ডিত। সে ‘তরিকায়ে মুহম্মদিয়া’ নামে একটি আন্দোলন শুরু করলো, যা ইতিহাসে 'ভারতীয় ওয়াহাবি আন্দোলন' নামে পরিচিত। কিন্তু দুর্ভাগ্য তার, উপমহাদেশে ‘দারুল ইসলাম’ প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে বালাকোটের যুদ্ধে মর্মান্তিকভাবে তার মৃত্যু হয়।

এই সায়িদ আহমদ বেরলবি যখন হজ্বযাত্রার উদ্দেশে কলকাতায় আসেন, তখন বহু বঙ্গবাসী তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। এসব শিষ্যের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন বারাসাতের মীর নিসার আলি ওরফে তিতুমীর। পেশাদার কুস্তিগীর ছিল তিতুমীর। যৌবনে নদীয়ায় এক হিন্দু জমিদারের অধীনে লাঠিয়ালদের সর্দারি করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয় এবং বিচারে কারাদণ্ড ভোগ করে। কারাদণ্ডের মেয়াদ শেষে যশোহর জেল থেকে বেরিয়ে সে ‘তরিকায়ে মুহম্মদিয়া’-য় যোগ দেয়।

তিতুমীরের উদ্ভাসের আগে ঊনিশ শতকের প্রারম্ভে বাংলাদেশে একটি মিশ্র সামাজিক এবং ধর্মীয় সংস্কৃতি বিরাজ করত। হিন্দু-মুসলমানের জীবনযাত্রার মধ্যে কিছু কিছু বৈসাদৃশ্য থাকলেও তার উগ্রতা অপেক্ষাকৃত কম ছিল বহু ক্ষেত্রে। গ্রামীণ মুসলমানদের মধ্যে জেহাদি তত্ত্ব তখনো প্রবলভাবে প্রবেশ করেনি। ফলে তাদের আচার-আচরণ ছিল সম্পূর্ণ মানবিক। বঙ্গদেশের মুসলমানরা চেহারায় ও বেশভূষায় হিন্দুদের থেকে পৃথক ছিল না। খাটো ধুতি, কাঁধে গামছা এই ছিল গ্রামের সাধারণ মুসলমানদের পোষাক। দাড়ি রাখা বা না রাখার বাছবিচার ছিল না। নামও ছিল তাদের হিন্দুঘেঁষা। যেমন পুরুষদের নাম দায়েম, কায়েম, সাজন, দানেশ, শেহেজান, শিহান, মধু এবং মেয়েদের নাম বাতাসী, কুড়ানী, শারী, শোভানী ইত্যাদি। এই মুসলমানরা নামাজ পড়ত ঠিকই, তবে একটিও আরবি শব্দের অর্থ না জেনেই।

তিতুমীর তার এলাকায় ওয়াহাবিদের নিয়ে দল গঠন করে স্থানীয় মুসলমানদের বাধ্য করে নাম পরিবর্তন করতে, আরবিয়দের মতো জোব্বা পরতে, দাড়ি রাখতে। ধুতির বদলে 'তাহ্‌বান্দ' নামে এক ধরনের বস্ত্র পরিধান শুরু করে। স্থানীয় মুসলমানরা মহরমের দিনে স্থানীয় দরগাতে ‘নজর’ দিত। তিতুমীরের অনুসারীরা এসবের বিরোধিতা করত। তারাগুনিয়া গ্রামে একবার তিতুমীরের অনুসারীরা মহরম অনুষ্ঠানে বাধা দেয় এবং দরগায় লাথি মারে। এ ঘটনায় স্থানীয় মুসলমানরা নালিশ করল জমিদারের কাছে। এই শুরু হলো জমিদারের সঙ্গে তিতুমীরের বিবাদ, শুরু হলো রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সূত্রপাত। সংঘর্ষ থামাতে হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হলো ইংরেজ সরকার। মামলা হলো তিতুমীর ও তার দলবলের বিরুদ্ধে। ফলে হিন্দুদের মতো ইংরেজ সরকারও তিতুমীরের বিরোধী পক্ষ হয়ে গেল। তিতুমীরের শত্রু ছিল পুঁড়োর জমিদার কৃষ্ণদেব রায়, গোবরডাঙার কালীপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়, তারাগোনিয়ার রাজনারায়ণ, নাগপুরের গৌরীপ্রসাদ চৌধুরী এবং গোবরা-গোবিন্দপুরের দেবনাথ রায়।

১) সেপ্টেম্বর মাস, ১৮৩১ সাল: বারাসাত জেলার বাদুড়িয়ার অন্তর্গত নারকেলবেড়িয়া গ্রাম। পঞ্চাশ বিঘা নিস্কর জমির মালিক মৈজুদ্দিন বিশ্বাসের জমিতে অজস্র বাঁশ দিয়ে বুরুজ তৈরী হল।

২) ২৩/১০/১৮৩১: এক বিরাট ওয়াজে জিহাদ ঘোষণা হল। প্রাথমিক লক্ষ্য বৃটিশ শাসন ও হিন্দু জমিদারদের উচ্ছেদ, কারণ শরিয়ৎ বিপন্ন। ২৩/১০/১৮৩১ থেকে ০৬/১১/১৮৩১ পর্যন্ত মৌলবীরা কেল্লাতেই আটকে থেকে পরিকল্পনা চূড়ান্ত করল।

৩) ২৮/১০/১৮৩১: বসিরহাটের দারোগা বারাসতের জয়েন্ট ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জানালেন জমিদার কৃষ্ণদেবের ওখানে তিতুমীরের অনুগামীরা গোহত্যা করতে চলেছে।

৪) ০৬/১১/১৮৩১: পুঁড়োর বাজারে ৫০০ জন জেহাদী তিতুমীরের প্রধান সেনাপতি গোলাম মাসুমের নেতৃত্বে মহেশ চন্দ্র ঘোষের একটা গরু ছিনিয়ে নিয়ে মন্দিরের সামনে কেটে বিগ্রহে গো-রক্ত মাখায়। গরুটিকে চার টুকরো করে পুঁড়োর বাজারের চার কোণে টাঙ্গিয়ে দিল।

৫) ০৭/১১/১৮৩১: ইচ্ছামতীর অপর পারে পৌঁছাল জেহাদীরা। দুটি ষাঁড় মেরে ভোজ হল। তারপর তাদের আক্রমণে লাউঘাট্টি বাজারে নিহত হলেন জমিদার তনয় দেবনাথ রায়। ফকির মিস্কিন শাহ এই জয়কে 'আল্লাহর জয়' বলে ঘোষণা করল। তিতুমীর ঘোষণা করল সে দার-উল-ইসলামের ঈমাম, তাকেই খাজনা দিতে হবে। জোর করে তোলা আদায় শুরু হল।

৬) ১৪/১১/১৮৩১: শেরপুর গ্রামে ইয়ার মহম্মদের বাড়ি আক্রমণ করল তিতু বাহিনী। ইয়ার মহম্মদের বিধবা কন্যা মুক্তবকে জোর করে নিকাহ করল তিতুর অনুগামী মহীবুল্লা। কনিষ্ঠা কন্যা কুমারী খুরমাকে অপহরণ ও নিকাহ করল কালু মিঞা।

৭) ১৬/১১/১৮৩১: ইন্ডিয়া গেজেট লিখল, রামচন্দ্রপুর গ্রামে হিন্দুদের মুখে জোর করে গোমাংস গুঁজে দেওয়া হচ্ছে।

এবার আলেকজান্ডার সাহেব তিতুর বিরুদ্ধে যাত্রা করলেন। বসিরহাট থানার দারোগা রামরাম চক্রবর্তীকে অপহরণ করল গোলাম মাসুম। বাঁশের কেল্লার মধ্যে হত্যা করা হল তাকে ইসলাম গ্রহণে অনিচ্ছুক হওয়ায়।
প্রথম দফার যুদ্ধে আলেকজান্ডার পরাজিত হয়ে পালালেন।

৮) ১৯/১১/১৮৩১: আলেকজান্ডার, সাদারল্যান্ড ও ম্যাকডোনাল্ডের নেতৃত্বে বাঁশের কেল্লা আক্রমণ করল ইংরেজ সৈন্য। এক ইংরেজ সৈন্য মেক্কানকে হত্যা করে তার দেহ বল্লমে গেঁথে সামনে রেখে গোলাম মাসুমের নেতৃত্বে প্রতিরোধ করল তিতু বাহিনী।

যুদ্ধ ..... যুদ্ধ ..... যুদ্ধ ......

তিতু সমেত জনা পঞ্চাশ জেহাদী নিহত, আহত জনা ত্রিশ, ২৫০ জন প্রায় ইংরেজদের হাতে বন্দী। ইংরেজ পক্ষে হতাহত ১৭।

জেহাদীদের বিচারের পর গোলাম মাসুমের মৃত্যুদন্ড হল, একুশ জনের যাবজ্জীবন কারাবাস, নয় জনের সাত বছরের, নয় জনের ছয় বছরের, ষোল জনের পাঁচ বছরের, চৌত্রিশ জনের তিন বছরের, বাইশ জনের দুই বছরের কারাদন্ড। বাকিদের নির্দোষ বলে ছেড়ে দেওয়া হল। ফটিক নামক এক হিন্দুকেও কেল্লা থেকে ধরা হয়েছিল, মানসিক ভারসাম্যহীন বলে সে মুক্তি পেল।

গোলাম মাসুমকে জনসমক্ষে বাঁশের কেল্লার সামনে ফাঁসি দেওয়া হল।

এই ভাবে বাংলার বুকে শরিয়ত চালু করার চক্রান্ত নির্মূল করা হল। অথচ বিশেষ বিশেষ ঐতিহাসিকদের বদান্যতায় এই জেহাদী জঙ্গী তিতুমীর আজ বীরের মর্যাদা পায়!

ভাইফোঁটার দিন আমরা যেন না ভুলি সেই রক্তাক্ত ইতিকথা।

11/11/2023

একদা এক বৈষ্ণব সাধু দক্ষিণেশ্বরে এসেছিলেন। তাঁর কাছে “রামলালা”র ( ভগবান শ্রীরামের বাল্যরূপ কে বলে রামলালা, যেমন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বাল্যরূপ কে গোপাল বলা হয় , তেমনই ) এক টি ধাতুর মূর্তি ছিলো। সকলে দেখতেন সেটি কেবল ধাতুর মূর্তি । কিন্তু সেই জটাধারী সাধু দেখতেন সত্যই সে বিগ্রহ জীবন্ত- তিঁনি খাচ্ছেন, কথা বলছেন , ছোটাছুটি করছেন আর পাঁচ জন শিশুর মতো। সাধু সেই ‘রামলালা’ কে যত্ন করে স্নান করাতেন, খাওয়াতেন। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ দেব নিজেও ভগবানের ঐরকম জীবন্ত রূপ দেখতে পেতেন । তিঁনি দেখতেন সাধুটি যখন ব্যস্ত – রামলালা এসে তাঁহার কাছেই উপস্থিত । পরে সাধু খুঁজতে খুঁজতে সেখানে এসে রামলালাকে দেখে বকাঝকা করে ধরে নিয়ে গিয়ে খাওয়াতেন । জটাধারী একদিন সেই রামলালার ইচ্ছায় সেই বিগ্রহ ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণকে দিয়ে দক্ষিণেশ্বর থেকে প্রস্থান করেন । ঠাকুরের বাৎসল্য রসের আস্বাদন বিরামহীন বৈচিত্রময় হয়ে উঠলো। ঠাকুর নিজে ভক্তদের কাছে বলেছেন –
◆➖◆🟣◆➖◆⚫◆➖◆🟣◆➖◆ ⚫◆➖◆🟣◆➖◆*

আমি দেখতুম, সত্যি সত্যি দেখতুম- এই যেমন তোমাদের দেখচি। সেইরকম দেখতুম- রামলালা সঙ্গে সঙ্গে কখন পেছনে নাচতে নাচতে যাচ্ছে। কখন বা কোলে উঠবার জন্যে আবদার করচে আবার কখন বা কোলে করে রয়েচি, কিছুতেই কোলে থাকবে না; কোল থেকে নেমে রোদে দৌড়াদৌড়ি করতে যাবে , কাঁটাবনে গিয়ে ফুল তুলবে, বা গঙ্গার জলে নেমে ঝাঁপাই পাড়বে! যত বারণ করি, ওরে অমন করিস নি, গরমে পায়ে ফোস্কা পড়বে- ওরে, অত জল ঘাটিস নি, ঠান্ডা লেগে সর্দি হবে, জুর হবে, সে কি তা শুনে ? যেন কে কাকে বলচে ! হয়তো সেই পদ্মপলাশের মত সুন্দর চোখ দুটি দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ফিক ফিক করে হাসতে লাগল, আর আরো দুরন্তপনা করতে লাগল, বা ঠোঁট দুখানি ফুলিয়ে মুখভঙ্গী করে ভ্যাঙচাতে লাগল। তখন সত্যি সত্যি রেগে বলতুম , তবে রে পাজী, রোস, আজ তোকে মেরে হাড় গুঁড়ো করে দেব।– বলে রোদ থেকে বা জল থেকে জোর করে টেনে নিয়ে আসি, আর এ জিনিসটা ও জিনিসটা দিয়ে ভুলিয়ে, ঘরের ভিতর খেলতে বলি। আবার কখন বা কিছুতেই তার দুষ্টুমি থামচে না দেখে চড়টা চাপড়টা বসিয়েই দিতুম । মার খেয়ে সুন্দর ঠোঁট দুখানি ফুলিয়ে জলভরা চোখে আমার দিকে তাকাত। তখন আমার মনে কষ্ট হত, কোলে নিয়ে কত আদর করে তাকে ভুলাতুম। এরকম সব ঠিক ঠিক দেখতুম, করতুম ।
◆➖◆🟣◆➖◆⚫◆➖◆🟣◆➖◆ ⚫◆➖◆🟣◆➖◆*

একদিন নাইতে যাচ্চি, বায়না ধরলে সেও যাবে। কী করি, নিয়ে গেলুম। তারপর জল থেকে আর কিছুতেই উঠবে না, যত বলি কিছুই শুনে না। শেষে রাগ করে জলে চুবিয়ে বললুম , তবে নে, কত জল ঘাঁটতে চাস ঘাঁট ; আর সত্যি সত্যি দেখলুম সে জলের ভিতর হাঁপিয়ে শিউরে উঠল! তখন আবার তার কষ্ট দেখে কী করলুম বলে কোলে করে জল থেকে উঠিয়ে নিয়ে আসি !
◆➖◆🟣◆➖◆⚫◆➖◆🟣◆➖◆ ⚫◆➖◆🟣◆➖◆*

আর একদিন তার জন্যে মনে যে কষ্ট হয়েছিল , কত যে কেঁদেছিলুম তা বলবার নয়,। সেদিন রামলালা বায়না করচে দেখে ভুলাবার জন্য চারটি ধানসুদ্ধ খই খেতে দিয়েছিলুম । তারপর দেখি , ঐ খই খেতে খেতে ধানের তুষ লেগে তার নরম জিভ চিরে গেছে । তখন মনে কষ্ট হল; তাকে কোলে করে ডাক ছেড়ে কাঁদতে লাগলুম আর মুখখানি ধরে বলতে লাগলুম , যে মুখে মা – কৌশল্যা লাগবে বলে ক্ষীর- সর- ননীও সন্তর্পণে তুলে দিতেন, আমি এমন হতভাগা যে, সেই মুখে এই কদর্য খাবার দিতে মনে একটুকুও সঙ্কোচ হল না ।
◆➖◆🟣◆➖◆⚫◆➖◆🟣◆➖◆ ⚫◆➖◆🟣◆➖◆*

শেষোক্ত কথাগুলি বলিতে বলিতে ঠাকুরের পূর্বশোক আবার উত্থালিয়া উঠিয়াছিল, এবং অধীর হইয়া তিনি এমন ব্যাকুলভাবে কাঁদিতে আরম্ভ করিয়াছিলেন যে, ভক্তদের চোখেও জল দেখা দিয়াছিল।
রামচন্দ্রের বালগোপাল মূর্তির অবিছিন্ন দিব্যদর্শন – লাভে সমর্থ হইয়া ঠাকুর অচিরে প্রত্যক্ষ করিলেনঃ
◆➖◆🟣◆➖◆⚫◆➖◆🟣◆➖◆ ⚫◆➖◆🟣◆➖◆*

যো রাম দশরথ কা বেটা ,
ওহি রাম ঘটঘটমে লেটা ।
ওহি রাম জগৎ পশেরা,
ওহি রাম সবসে নেয়ারা ।

◆■ ꧁ω⬛ω꧂■◆*কালো বিড়ালকে কেন অশুভ বা দুর্ভাগ্যের প্রতীক বলা হয় ? *◆■ ꧁ω⬛ω꧂■◆আদর করে ঘরে সাদা বিড়াল, ছাই রঙের বিড়াল বা বাদ...
11/11/2023

◆■ ꧁ω⬛ω꧂■◆*কালো বিড়ালকে কেন অশুভ বা দুর্ভাগ্যের প্রতীক বলা হয় ? *◆■ ꧁ω⬛ω꧂■◆

আদর করে ঘরে সাদা বিড়াল,
ছাই রঙের বিড়াল বা বাদামী বিড়াল পুষলেও কালো বিড়াল সাধারণত কেউ পোষেন না। বেশীরভাগ মানুষই কালো বিড়াল কে অশুভ মনে করেন।
দুর্ভাগ্যের প্রতীক মনে করেন।
কেবল আমাদের দেশেই নয় বরং পুরো বিশ্বেই এই কালো বিড়ালকে দুর্ভাগ্যের প্রতীক মনে করা হয়।
এমন কি অনেক দেশের মানুষ মনে করেন চলতি পথে কালো বিড়াল দেখলে বিপদ সুনিশ্চিত।
●●▪️●●▬▬🔱•''''•🕉️•""•🔱▬▬●●▪️●●
কিন্তু, শুধুমাত্র গায়ের রঙের জন্য ই কি কালো বিড়ালকে দুর্ভাগ্যের প্রতীক বলা হয় ? নাকি এর আড়ালে রয়েছে কোন দুর্ভাগ্যজনক অতীত ?

◆■ ꧁ω⬛ω꧂■◆*অদ্ভুত এক ইতিহাসঃ - *◆■ ꧁ω⬛ω꧂■◆

কয়েক হাজার বছর আগের সময়। তখন মিশর দেশে সব রঙের বিড়ালই সুখে স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস করত। যেখানে বিড়াল হত্যা করলে মৃত্যু দন্ডাদেশের মত ভয়াবহ শাস্তি ভোগ করতে হত।
●●▪️●●▬▬🔱•''''•🕉️•""•🔱▬▬●●▪️●●
কয়েক সহস্রাব্দ পরে, খ্রিস্টানিয় স্থানীয় পৌতলিক রীতিনীতি
এবং ঐতিহ্য উৎখাত করে পুরো ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। সে সময় ধারনা করা হয়,
প্রত্যেক দেব দেবীর একটি করে পৌতলিক প্রতীক থাকে যার সাথে দেব দেবীরা যোগাযোগ করেন অতি দ্রুত। যেমন, দেবী ডায়নার পৌতলিক প্রতীক ছিলো বিড়াল।
●●▪️●●▬▬🔱•''''•🕉️•""•🔱▬▬●●▪️●●
১২৩৩ খ্রিষ্টাব্দে, পোপ গ্রেগরী নবম, একটি কালো বিড়ালে কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেন এবং ঘোষণা দেন,
শয়তানের একটি অবতার হল এই কালো বিড়াল।
●●▪️●●▬▬🔱•''''•🕉️•""•🔱▬▬●●▪️●●

◆■ ꧁ω⬛ω꧂■◆*ঘোষণা পরবর্তী নির্মম ইতিহাসঃ - *◆■ ꧁ω⬛ω꧂■◆

পোপের প্রতি নিষ্ঠা প্রমান করতে উৎসুক খ্রিষ্টানরা সব কালো বিড়ালকে ধরপাকড় শুরু করে দেয় এবং গ্রাম্য অনুষ্ঠানে কালো বিড়াল কে জীবিত অবস্থায় আগুনে পুড়িয়ে মারে।
অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিলো যে ১৪ শতকের দিকে
ইউরোপের বেশ কিছু অংশে কালো বিড়াল বিলুপ্ত প্রায় হয়ে গিয়েছিলো।
●●▪️●●▬▬🔱•''''•🕉️•""•🔱▬▬●●▪️●●

পরবর্তী কয়েক শতাব্দীতে এই ধারনা পোষণ করা হয়
যে স্বাভাবিকভাবেই কালো বিড়াল সব শয়তানের নেতৃত্ব দেয় এবং ডাইনীরা পৃথিবীতে কালো বিড়ালের ছদ্মবেশ নিয়ে আসে।
●●▪️●●▬▬🔱•''''•🕉️•""•🔱▬▬●●▪️●●
অন্যরা আবার বলতে শুরু করে যে একটি কালো বিড়াল সাত বছর ছদ্মবেশ নিয়ে থাকে এবং তারপর ই তার ডাইনী রুপ দেখায়।
এমনকি এই ধারনার কারনে তৎকালীন সময়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার জন্য একটি কালো বিড়ালের পালক হওয়া ই যথেষ্ট ছিলো!
●●▪️●●▬▬🔱•''''•🕉️•""•🔱▬▬●●▪️●●

◆■ ꧁ω⬛ω꧂■◆*পরিশেষঃ - *◆■ ꧁ω⬛ω꧂■◆

যথেষ্ট হাস্যকর হলেও সত্য যে আজ অবদি এই কালো বিড়ালের কুসংস্কার নিজেদের দুর্ভাগ্য ছাড়া আর কিছুই করেনি।
২০১৩ সালে Colonado State University এর করা এক গবেষণায় দেখা গেছে
সাধারণ বিড়াল চেয়ে, কালো বিড়ালের ৪-৬ দিন বেশি সময় লাগে কোন পালনকারী খুঁজে পেতে। শুনতে খারাপ লাগলেও ৭০ শতাংশ কালো বিড়ালের জন্য কোন আশ্রয়দাতা মিলে না।

এমন কি গবেষকরাও নিশ্চিত বলতে পারবেন না ঠিক কি কারনে, আশ্রয়প্রাপ্ত মালিকদের কাছে কালো বিড়াল কম আকর্ষণীয়।হতে পারে, পুর্ববর্তী সেই কুসংস্কারের দায় আজো তাদের বয়ে বেড়াতে হচ্ছে।
●●▪️●●▬▬🔱•''''•🕉️•""•🔱▬▬●●▪️●●

কালো বিড়াল আমাদের দুর্ভাগ্যের প্রতীক নয় বরং তাদের নিজেদের ই দুর্ভাগ্যের প্রতীক।
" এক আকাশ অন্ধকার মাথায়
নিয়ে বসে আছে একটা কালো বিড়াল চারিদিকে গা ছমছমে নীরবতা আর হাড় হিম করা অন্ধকার। সেই কবে থেকে বসে আছে বিড়ালটা, সমস্ত আলো নিভে কেমন করে কালো কার্বনের
মতো অন্ধকার নামল অফিস পাড়ায় – সব দেখছে সে। বাতাসে ভারী পর্দা দুলে ওঠে সিঁড়িতে কাদের আনাগোনা! কাঁটা-চামচ আর কাপ-প্লেটের ঝনঝন শব্দ,
করিডোরে পাতাবাহার গাছেরা
লজ্জায় শুকিয়ে কাঠ, – কোনো উজ্জ্বল ব্যক্তিত্বের পদস্খলন হল বুঝি।দমকা হাওয়ায় ঘরের আলো
এক এক করে নিভছে,খোলা ফাইলের পাতাগুলো সামনে-পিছনে, ডাইনে-বাঁয়ে উড়ছে, কে যেন
‘সৎভাবনা’ ‘স্বচ্ছতা’ ইত্যাদি শব্দ
লেখা কাগজগুলো বাস্কেটে
ছিঁড়ে ফেলে দিচ্ছে। একেবারে কোণের ঘরের দেওয়ালের ঈশাণ কোণে খালি গায়ে,খালি পায়ে, হাতে লাঠি, গোল চশমা পরা
এক বৃদ্ধকে নড়েচড়ে
উঠতে দেখে বিড়ালটা
ভাবল এবার বোধহয়
তার চলে যাওয়ার
সময় এসেছে। "

Address

John Appleseed, 1 Infinite Loop
Cupertino, CA
95014

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when আমরা সবাই বেদান্তি posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to আমরা সবাই বেদান্তি:

Share