14/06/2025
Real Madrid 🤝 Barcelona
স্প্যানিশ ফুটবল আবারও ইউরোপীয় ফুটবলের মঞ্চে রাজত্ব করার জন্য রেডি। রিয়াল মাদ্রিদ আর বার্সেলোনা দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাব এখন একসাথে "সুপার টিম" হয়ে উঠছে। ট্রান্সফার মার্কেট, কোচিং সেটআপ, ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান, আর গেমপ্লে সব কিছুতেই স্প্যানিশ দলগুলোর রীতিমতো আধিপত্য তৈরি হচ্ছে। ইউরোপের অন্য বড় দলগুলো যেখানে নতুন কোচ, বিশাল অঙ্কের টাকা খরচা করে প্লেয়ার কেনা, ইনজুরি, ফিনান্সিয়াল ফেয়ার প্লে ইত্যাদি নিয়ে ধুঁকছে, সেখানে রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা নিজস্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোচ্ছে।
রিয়াল মাদ্রিদ তো আগেই ইউরোপের রাজা ছিল। কিন্তু ২০২৫ মৌসুমে এসে তারা একেবারে গ্যালাক্টিকো মডেল নিয়ে মাঠে নামছে। এমবাপ্পে, বেলিংহ্যাম, ভিনিসিয়াস, ট্রেন্ট, রদ্রিগো, কামাভিঙ্গা, চুয়ামেনি, এন্ড্রিক, হাউসেন আর ফ্রাঙ্কো মাসতান্তোনোর মতো তরুণ প্রতিভা আর সুপারস্টারদের নিয়ে দল সাজানো হয়েছে। নতুন কোচ জাবি আলোনসো যোগ হওয়ায় দলটার ফুটবল আরও ট্যাকটিক্যাল এবং এ্যাট্রাকটিভ হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, কোনো প্লেয়ারকে সই করাতে হলে রিয়ালের একটা ইশারা মানেই খেলোয়াড় রাজি। এই যে 'প্লেয়ার পুলিং পাওয়ার', এটা এখন কেবল রিয়াল নয়, বার্সার মধ্যেও আছে।
বার্সেলোনা একটু আর্থিক চাপে থাকলেও, ইয়ুথ একাডেমি ‘লা মাসিয়া’র জাদুতে আবার মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে। এখন তো ফিন্যান্সিয়াল ইস্যুতে ১:১ রুলের মধ্যেও চলে এসেছে। তারা এখন যাকে চাইবে তাকেই সই করাতে পারবে। লামিন ইয়ামাল, ফার্মিন, গাভি, পেদ্রি, কুবার্সি—এরা সবাই নিজেদের ক্লাবের ‘মেইড ইন বার্সা’ ব্র্যান্ডের প্রতিনিধিত্ব করছে। বায়ার্ন মিউনিখ ও প্রিমিয়ার লীগে যাওয়ার বিশাল সুযোগ থাকলেও কম বেতনে বার্সেলোনায় যোগ দিতে রাজি নিকো উইলিয়ামস। তাছাড়া হান্সি ফ্লিকের মতো অভিজ্ঞ কোচ আসায় বার্সার খেলায় এখন জার্মান পরিশ্রম আর স্প্যানিশ টিকিটাকার অদ্ভুত মিশেল দেখা যাচ্ছে। মেসির পরবর্তী যুগে ওদের এক ধরনের পরিচয় সংকট তৈরি হয়েছিল, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে নতুন যুগের বার্সা নিজেকে খুঁজে পেয়েছে।
ইউরোপীয় ফাইনালে স্প্যানিশ ক্লাবগুলোর রেকর্ডও কম কিছুনা! চ্যাম্পিয়ন্স লীগে রিয়াল মাদ্রিদের ১৫টা শিরোপা, ইউরোপা লিগে সেভিয়ার একচ্ছত্র আধিপত্য (৭টা ইউরোপা ট্রফি), সুপার কাপসহ সব মিলে গত দুই দশকে ইউরোপের প্রায় অর্ধেক ফাইনালেই কোনো না কোনো স্প্যানিশ দল থাকে। ২০০০ সাল থেকে ইউরোপীয় ফাইনালে স্প্যানিশ ক্লাবগুলোর জয় শতাংশ ৮০%-এর উপরে! এর মানে, শুধু ফাইনালে উঠা না তারা ট্রফি নিয়েও মাঠ ছাড়ে; এর একটা বড় কারণ স্প্যানিশ ক্লাবগুলোর সাফল্যের পেছনে হল গেমপ্লে। যেখানে ইংলিশ ক্লাবগুলো ফিজিক্যালিটি আর হাই প্রেসিংয়ের উপর ভরসা করে, সেখানে স্প্যানিশ দলগুলো খেলে কন্ট্রোলড পজিশন ফুটবল, নিখুঁত পাসিং আর রিদমে। এই কারণে বড় ম্যাচে তারা মাথা ঠান্ডা রাখতে পারে, যা ফাইনাল জেতার সময় অনেক জরুরি।
ফিউচার প্ল্যানিং-এর দিক থেকেও রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা বেশ স্ট্র্যাটেজিক। রিয়াল আগে থেকেই তাদের পরবর্তী দশকের জন্য সাইনিং করছে—মাস্টান্তোনো, এন্ড্রিক, আর ডিন হুইজেনের মতো তরুণ প্রতিভা দলে এসে গেছে। বার্সা আবার তাদের 'গোল্ডেন জেনারেশন ২.০' নিয়ে সাফল্যের পথে হাঁটছে। দুটো ক্লাবই জানে, শুধু নামেই বড় হলে চলবে না তাদের থেকে কিভাবে পারফরম্যান্স বের করে নিতে হবে সেটাও তারা জানে।